Download ডেভিড বার্গম্যান
শুনছিলেন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় তরুন ব্যান্ড ‘বাংলা’র গান। বিশেষ করে এই ব্যান্ডটি অনান্য ব্যান্ডের চেয়ে সঙ্গীতে গ্রাম বাংলার চারণধর্মী মরমী দর্শনকে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ব্যান্ডের প্রধান গায়ক আনুশেহ্ আনদিল অভিজাত বাংঙ্গালী পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। ডেভিড বার্গম্যান জানতে চেয়েছিলেন কিভাবে গ্রামীন সঙ্গিতের প্রতি আসক্ত হয়েছিলেন তিনি।
আনুশেহঃ শৈশবেই বুঝতে পেরেছিলাম বাংলাদেশে দুই ধরনের সংস্কৃতি আছে। একটি খাঁটি গ্রামীণ সংস্কৃতি যার নিজস্ব সৌন্দর্য্য আছে আর অন্যটি পরিশীলিত শহুরে সংস্কৃতি। এবং আমার মনে হয় এই দুই সংস্কৃতি একে অপরের সাথে খাঁপ খায়না। সুতরাং আমরা তাদের বুঝতে পারিনা, তারাও বুঝতে পারেনা আমাদের। একই সাথে অসম দুটি সংস্কৃতির অস্থিত্ব রয়েছে এখানে। সুতরাং অবশ্যই তাদের মাঝে বিভেদ আছে। বড় হতে হতে এমনই জেনেছি।
গানের সুরে সুরে সেই বিভেদের মাঝে সেতুবন্ধ রচনার চেষ্টা করেছেন আনুশেহ্।
তাঁর গান জনপ্রিয় করেছে গ্রাম বাংলার মরমী বাউল দর্শনকে ।
আনুশেহঃ শুদ্ধতাই বাউলদের প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। ১২-১৩ বছর বয়স হতেই কাঙ্গালীনি সুফিয়ার গান শুনতাম। তিনি গাইতেন, কেমন করে তিনি পাল্টে গেছেন, আগেতো এমন ছিলেননা। এমনসব মহান শিল্পির গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি আমি। খাটিঁ গলায়, খাটিঁ সুরে গানের এমন মর্মকথা আগে কখনো শুনিনি। নিজের ভেতরে সেই বিশুদ্ধতা চাই বলে, সন্ধান করি বাউলদের। যেই বিশুদ্ধতা আমাকেও একদিন শুদ্ধ করবে।
অবশ্যই বাউল সঙ্গিত জাতীয় গরবো বলছিলেন আনুশেহ্।
আনুশেহঃ আমাদের প্রজন্ম এবং আগের প্রজন্ম লুকিয়ে থাকা এই সম্পদ ছাড়া বাংলাদেশে গর্ব করার মতো আর কিছুই পাইনি। এই ইন্দ্রজাল আমার জন্য এক উপহার। যানজট, দূর্নীতি এবং সকল প্রকার হীনতার মাঝেও আমাদের আছে পরম এই ইন্দ্রজাল। যাদের আমরা গোরা বলি ঢাকার বাইরে গেলে তথাকথিত দাড়িওয়ালা সেইসব মোল্লাদের আপনি দেখতে পাবেন। সারাবিশ্ব যেমন বাংলাদেশকে দেখে এটিই কি বাংলাদেশ? তারা আমাদের আহাম্মক বানিয়ে রাখতে চায়। অতিরিক্ত নেতিবাচক ধারনা দিয়ে তারা আমাদের পেছনে ঠেলে দিতে চায়। সুতরাং আমি মনে করি ইতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরে নেতিবাচক ধারনাগুলো দুর করার দিকে আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
বাউল সঙ্গিত বাংলাদেশের মরমী আদি ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে।
উনিশ শতক এবং বিশ শতকের দিকে গোড়ার দিকে এই দর্শন চুড়ান্ত রুপ পায়। যদিও এখন বাংলাদেশে প্রকৃত বাউল খুবই কম তবুও এই সঙ্গিত ছড়িয়ে পড়ছে।
একদম আলাদা পরিমন্ডলের হিন্দুত্ববাদ, বৌদ্ধবাদ এবং সুফিবাদের মিলিত রুপ এই বাউল দর্শন।
আনুশেহঃ এই দর্শনের একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো দেহকে তালাশ করা এবং বর্তমানকে সেভাবেই বিচার করা। দেহ হচ্ছে একটি প্রজেক্টর যা দিয়ে আমি পুরো বিশ্বের ছবি আমি পাই। যা কিছু আমি দেখি সবই এই দেহ দিয়ে। সুতরাং যখন আপনি দেহকে জানবেন তখন আপনি বিশ্বকে জানবেন। এবং আমি মনে করি এটাই বাউল দর্শন। যেখানে চেতনা ছাড়া অন্য কোন চিরন্তন বিষয় নেই। অনেকটা মানসিক দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করার মতো বিষয় । বব মার্লি যেমন বলেছিলেন, সকল বিপ্লব বাইরের নয়, কিছুটা তার অন্তরে হয়। একটি গান আছে অনেকটা জন লেননের ইমাজিন গানটির মতো। যখন এমন এক সমাজ হবে যেখানে বর্ণ নেই, লোভ নেই। যেখানে সমাজ হবে শ্রেনীহীন থাকবেনা হিন্দু- মুসলিম, শ্রেনী বিভেদ। এমন সমাজ হবে একদিন।
১৯৮৮ সালে বাংলা ব্যান্ড গঠিত হয়।
আনুশেহঃ যখন আমরা ব্যান্ড গঠন করি তখন আমরা কি করতে যাচ্ছি তার ধারনাই আমাদের ছিলনা। আমরা শুধু আমাদের নিজেদেরকে প্রকাশ করেছিলাম। ধীরে ধীরে একদিন দেখলাম একেবারেই নতুন কিছু, শহুরে প্রেক্ষাপটে বাউল গান। আমি এবং ব্যান্ডের অনান্য সদস্যরা সবাই বড় হয়েছে ঢাকায়। আমার জন্য একতারা বা দোতরায় নিজেকে প্রকাশ করা কঠিন কারন আমি শহুরে যানজট, মোবাইল ফোন এবং ভয়ানক শব্দ দুষনের মাঝে বড় হয়���ছি। সুতরাং আমার অনুভুতি প্রকাশের জন্য চাই গীটারের রুপান্তরিত শব্দ। এবং আমি মনে করি, যখন আমরা এটিকে সঙ্গিতের রুপ দিচ্ছি তা স্বাভাবিক ভাবেই শহুরে তরুন প্রজন্মকে প্রকাশ করছে। কারন এটি বাংলাদেশী তারুন্যের কন্ঠস্বর।
এবং পরিক্ষামূলক সুরের এই ব্যান্ডটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছে। রয়েছে বিশাল ভক্তকূল। প্রচুর কনসার্টে এখন অংশ না নিলেও তাদের অ্যালবাম খুবই জনপ্রিয়।
আনুশেহঃ তরুনরা নিজেদের আত্ন পরিচয়ের জন্য তৃষ্ণার্ত। তার সব সময়ই নতুন কিছু চায় যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে। যতবার আমি গান করতে গিয়েছি, সত্যিকার অর্থেই আমি বুঝতে পেরেছি তরুনরা পরিবর্তনের জন্য পাগল। তারা পরিবর্তন চায়। নতুন যা কিছুই তাদের দেয়া হোক তারা তা আকরে ধরবে। এটার এমন কোন মোহীনিশক্তি নেই। ব্যান্ড সঙ্গিতে বাংলার কোন কিছুই প্রকাশ করেনা। আমাদের আগে ব্যান্ডের কোন কিছুই বাংলার ছিলনা। এটি একটি রক ব্যান্ড যারা হেরে গলায় সুরেলা গান করে। সুতরাং আমি মনে করি বাউল গানকে ব্যান্ডের মাধ্যমে প্রকাশ করার ধারনাটি নতুন ছিল।
ভক্তরা কোন গানটি আপনার কাছে সবসময় শুনতে চায়।
আনুশেহঃ একটি গান আছে যা পুরোপুরি বাউল গান নয় কিন্তু বাউল গানের ছায়া আছে। আমার ঘরে বাস করে কারা ও মন জানোনা, একজনে গড়ে, অন্যজন ভাঙে। কে আবার নিয়ে যায় এগিয়ে।